-->

নেপালের তরুণ বিদ্রোহ পরিবর্তনের আহ্বান !

বাংলার কথা NEWS 24X7
0
নেপাল আজ এক অস্থির সময়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
 তরুণরা রাস্তায় নেমেছে তাদের স্বাভাবিক মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার দাবিতে, যা অল্প সময়ের মধ্যে একটি সর্বাত্মক সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। তবে এই বিদ্রোহ শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাধীনতার জন্য নয়; এটি দুর্নীতি, প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং রাজনীতির দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের সচেতনতার প্রতিফলন। নেপালের “Gen Z” তরুণরা প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত, বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত এবং ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। তারা দেখাতে চাচ্ছে যে, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে এবং পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এই আন্দোলনের সময় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে, শতাধিক আহত হয়েছে এবং সাময়িকভাবে সেনাবাহিনীকে মাঠে নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। সরকার শেষে সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, কিন্তু আস্থার অভাব আরও জোরালো হয়েছে।তরুণদের এই ক্ষোভ শুধু রাজনৈতিক নয়; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যকে কেন্দ্র করে গঠিত। নেপালের অর্থনীতি কিছুটা শক্তিশালী হলেও খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের অভাব তাদের জীবনকে কঠিন করে তুলছে। রেমিটেন্স প্রবাহে আশার আলো থাকলেও দেশে তরুণদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, যার ফলে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশে ‘ব্রেইন ড্রেইন’ বাড়ছে এবং দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ক্ষয় পাচ্ছে। নেপালের রাজনৈতিক পরিবেশও স্থিতিশীল নয়। সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক, দলীয় স্বার্থ ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব জনগণের আস্থা ক্ষয় করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক সংঘাত ও দুর্নীতির কারণে নাগরিকরা নিরাশ। এই পরিস্থিতি তরুণ প্রজন্মকে আরও সক্রিয় করেছে, এবং তারা বোঝাচ্ছে যে পরিবর্তন চাইলে সরাসরি পদক্ষেপ নিতেই হবে। রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনকে এখন বুঝতে হবে যে, যুবসমাজ কেবল তাদের চুপচাপ অনুসরণ করবে না। তরুণরা প্রমাণ করেছে যে তারা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য রাস্তায় নামতে পারে, এবং এটি একটি শক্তিশালী সামাজিক সংকেত। যদি এই সংকেতকে অবজ্ঞা করা হয়, তাহলে অশান্তি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে ।নেপালের বর্তমান অস্থিরতা মোকাবিলায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রথমত, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ এবং জনগণের আস্থা পুনর্গঠন অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা ও শিল্প বিনিয়োগ বাড়ানো এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন তরুণদের দেশে থাকতে প্রলুব্ধ করতে পারে। তৃতীয়ত, সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। নাগরিকরা ন্যায়বিচারে আস্থা হারালে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। চতুর্থত, সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের মধ্যে খোলামেলা সংলাপ অপরিহার্য। এটি আন্দোলনের শক্তিকে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। 

নেপালের ‘Gen Z’ আন্দোলন কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়; এটি পরিবর্তনের আহ্বান। নতুন প্রজন্ম বলছে, “পরিবর্তন হবে যদি আমরা সক্রিয় হই।” সরকারের জন্য এটি একটি সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই। যদি তারা স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং যুবসমাজের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, তবে এই সঙ্কট এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।

নেপালের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের সিদ্ধান্তের উপর—যদি সঠিক সময়ে সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তবে নেপাল হতে পারে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও সমৃদ্ধ দেশ, যেখানে তরুণ শক্তিই দেশের বিকাশের মূল চালিকা শক্তি।

Post a Comment

0 Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Ok, Go it!