পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে এক ২৩ বছর বয়সী প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনায় যুক্ত চার অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ, এবং দ্রুত চার্জশিট দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে।
তবে ঘটনার তদন্ত চলাকালীনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মন্তব্য ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী এক প্রশাসনিক সভায় বলেন, “কোনও মহিলাকে রাতে বাইরে যেতে দেওয়া উচিত নয়।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ওই ছাত্রী রাত ১২টা ৩০ মিনিটে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেলেন, যখন ওই এলাকা বনভূমি সংলগ্ন ও নির্জন। তাঁর বক্তব্য, “কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যদি রাতে কেউ বাইরে যায়, তাহলে সেটা প্রশাসনিক ত্রুটি।”
এর ফলে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত ঘটনার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাড়ে চাপান।
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া: ‘ভিকটিম-শেমিং নয়, নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’
এই মন্তব্যের পরেই বিরোধী দল, নারী সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা সরব হন।
তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী ‘ভিকটিম-শেমিং’-এর পথে হাঁটছেন, যা সমাজে নারীদের স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসের ওপর আঘাত।
বিরোধীদের বক্তব্য, “একজন নারী কোথায়, কখন যাবেন—তা তাঁর মৌলিক অধিকার। প্রশাসনের দায়িত্ব হল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, না যে তাঁর চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ চাপানো।”
সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি—তিন দলেরই নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে “অসংবেদনশীল ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে আখ্যা দিয়েছে।
বিতর্কের জেরে মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, তাঁর বক্তব্য “মিডিয়া বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে”।
তিনি স্পষ্ট করেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল রাতের সময়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি তুলে ধরা, মেয়েদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা নয়।
এই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে চারজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, এবং ঘটনাস্থল থেকে ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। তদন্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে ওড়িশার একটি প্রতিনিধিদল, যারা ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছে।
সমাজের নানা স্তর থেকে দাবি উঠেছে, শুধু কঠোর বিচার নয়, নারী নিরাপত্তা ও সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তনও সমান জরুরি।
আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও নারী সংগঠনগুলির মতে, “দোষীকে শাস্তি দেওয়ার পাশাপাশি, প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে দায়িত্ববান হতে হবে—যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।”
দুর্গাপুরের এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু অপরাধ বা প্রশাসনিক ব্যর্থতার ইঙ্গিতই নয়, বরং সমাজের মানসিকতার প্রতিফলনও বটে। মেয়েদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ নয়—বরং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।
